মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:১৭ পূর্বাহ্ন

অক্টোবর থেকে কমতে পারে জ্বালানি তেলের দাম

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ই-কণ্ঠ অনলাইন:: বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। এক লাফে প্রায় ৪৭ শতাংশ দাম বাড়ানোর ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে পড়ে নিদারুণ চাপ। অযৌক্তিক ভাবে দাম বাড়ানোর প্রশ্নে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে দেশে তেলের দাম সমন্বয় করা হবে।

গত কয়েকদিন যাবত বিশ্ববাজারে দফায় দফায় তেলের কমলেও দেশের বাজারে সমন্বয়ের কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী থাকা জ্বালানি তেলের দাম সবশেষ পৌঁছায় ৮৮ দশমিক ১১ ডলার মার্কিন ডলারে। একই সময়ে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৯১ দশমিক ৫১ ডলারে দাঁড়ায়, যা গত ৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

গত ৫ আগস্ট ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম ছিলো ব্যারেলপ্রতি ৮৯ ডলার। আর ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ছিলো প্রতি ব্যারেল ৯৪ ডলার। যদিও গত মার্চ মাসে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম উঠেছিলো ১২০ ডলারে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম সর্বোচ্চ থাকার পরেও তেলের দাম বাড়ায়নি সরকার। সে সময় বিপিসি ভর্তুকি দিয়ে তেল সরবরাহ বজায় রাখছিলো। সরকার তেলের দাম বাড়ায় এমন একটি সময়ে, যখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিম্নমুখী।

মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কম মূল্যের তেলের চালান অর্ডার করা হবে। ফলে অক্টোবর থেকে জ্বালানি তেলের দাম ধীরে ধীরে কমতে পারে। বিশ্ববাজারে পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে এ বছরেই দেশে জ্বালানি তেলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বেড়েই চলছিলো জ্বালানি তেলের দাম। চলতি বছরের জুন মাসে ক্রুড অয়েলের মূল্য ১১৭ মার্কিন ডলার অতিক্রম করে। আর পরিশোধিত ডিজেলের দাম পৌছায় ১৭০ ডলারে। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্যই দেশের বাজারে বাড়ানো হয় তেলের দাম। পাশাপাশি সরকারি তেল বিপনন সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) দৈনিক ৯০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির কারণ দেখানো হয়। যদিও সংস্থাটি ২০১৪ সালের পর প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। যার মধ্য থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংকের এফডিআরের মাধ্যমে গচ্ছিত রাখে সংস্থাটি।

কয়েকদিন আগেই জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশে সমন্বয় করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি।

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সংস্থা থেকে ৬ মাসের চুক্তি আকারে তেল কেনা হয়। সে চুক্তি আকারেই দাম পরিশোধ করতে হয়। তবে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ৮০ ডলারের উপরে থাকলে বিপিসির লোকসান হয়। সেক্ষেত্রে দাম যদি ৮০ ডলার বা নিচে নেমে আসে, তাহলে দাম সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়া হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে প্রয়োজন সুষ্ঠু নীতিমালা প্রয়োজন। অধ্যাপক ইজাজ আহমেদ বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম সমবসময় ওঠনামা করতে থাকে। আজ কমলে দেখা যাবে কাল আবার বেড়ে গেছে। ফলে একটা ইকোনমিক্যাল ইমব্যালান্স তৈরি হবে। আমাদের স্টোরেজের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যেন দাম কমলে সে তেলটা কিনে রিজার্ভে রাখতে পারি। পাশাপাশি একটা পরিপূর্ণ নীতিমালা তৈরি করা, যেন দাম বাড়লে কমলেও দেশে যেন দাম স্থিতিশীল থাকে।

অধ্যাপক ম তামিম বলেন, বাংলাদেশে তেল বিপনন করে থাকে বিপিসি। যাদের কার্যক্রম অস্বচ্ছ। তারা বলেছিলো প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাাক লোকসান দিচ্ছে। কিন্তু সেটা কিসের ভিত্তিতে সেটা বলে নি। বিপিসির একচেটিয়া ব্যবসার ফলে তেলের দামে নিয়ন্ত্রন আনা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ রেগুলেটরি কমিশন কিন্তু এলপিজি গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ওঠানামার সাথে সমন্বয় করে ভোক্তাপর্যায়ে দাম নির্ধারন করে। যেটা বিপিসির ক্ষেত্রে হয় না। সরকারের উচিৎ জ্বালানি তেলের বিপননের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা তৈরি করা। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর সাথে মিল রেখে সঠিক নীতিমালা তৈরি করা। দাম বাড়ুক বা কমুক, সেটা যেন এভারেজ মাত্রায় থাকে সবসময়। নাহলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে গেলে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com